অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) - Science (Exercise Book) - NCTB BOOK

ভেজাল খাদ্য একটি সামাজিক সমস্যা যা দৈনন্দিন জীবনে আমারা সবাই মুখোমুখি হয়েছি। এই সমস্যা গণস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। কতিপয় অসাধু মানুষ বেশি লাভের জন্য খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিতে ভেজাল দিচ্ছে। যার মাধ্যমে মানুষ নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত সৃষ্টি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের উপস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে অনেক ধরনের খাবারে আমরা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি দেখা যায়, যা শাকসবজি, দুধ, ফলমূল এবং মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন খাবারে থাকতে পারে। ভেজাল খাবার মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ হতে পারে। এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েই আমাদের এবারের অনুসন্ধান!

সেশন শুরুর আগে

  • তোমরা আগেই জেনেছ, খাদ্যে ভেজাল এখন একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পত্রপত্রিকা, টিভি নিউজ তো বটেই তোমরা নিজেরাও হয়তো কখনো না কখনো ভেজাল খাদ্যের প্রতারণায় পড়েছ।
  • সেশনের শুরুতেই তোমাদের কাজ হবে পত্রিকা, টেলিভিশনের খবর, ইন্টারনেট, বাড়ির বড়োদের কাছ থেকে কিংবা এলাকার খাদ্য ব্যবসায়ী, মুদির দোকানদারের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট খাদ্যে ভেজাল সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে টিক চিহ্নের মাধ্যমে নিচের ছকটি পূরণ করা। একাধিক খাদ্য সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে চাইলে নিচের ছকটির মতো করে একটি ছক তোমার খাতায় তুলে নিয়েও কাজটি করতে পারো। এমনকি চাইলে তুমি নতুন কোনো প্রশ্নও যোগ করে নিতে পারো।
আপনি কি খাদ্যে ভেজাল সম্পর্কে জানেন?হ্যাঁ    না
খাবারের ধরনশাকসবজি    মাছ-মাংস   দুধ   প্রক্রিয়াজাত    অন্যান্য
কী ধরনের খাদ্য দূষণ?রাসায়নিক জীবাণু      মাইক্রো প্লাস্টিক    টেক্সটাইল রং    অপদ্রব্য    অন্যান্য
কোথায় খাদ্যে ভেজাল ঘটে?বাড়ি  রেস্টুরেন্ট   বাজার    কারখানা   অন্যান্য
ভেজালের কারণ?  টেক্সটাইল রং    কীটনাশক    অ্যান্টিবায়োটিক   দূষিত পানি   ফরমালিন   অন্যান্য
স্বাস্থ্যের উপর ভেজালযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রভাব ক্যান্সার চর্মরোগ         ফুসফুসের সমস্যা   দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি       খাদ্যে বিষক্রিয়া        অন্যান্য    
ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করে আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়েছেন?হ্যাঁ না
খাদ্যে ভেজাল নিরসনে করণীয় কী হতে পারে?  খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ    সরকারি বিধিবিধান ও আইন   গণসচেতনতা     সঠিকভাবে খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ     অন্যান্য

কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে 'অন্যান্য' ঘরটি তোমরা নিজেরা লিখে নিতে পারো। একাধিক উত্তরের ক্ষেত্রে একাধিক টিক চিহ্ন দেওয়া যেতে পারে।

প্রথম সেশন

  • ক্লাসে তোমার পাশের সহপাঠীর সঙ্গে তোমার সংগ্রহ করা তথ্যগুলো শেয়ার করে নাও।
  • এবার ক্লাসের সবার সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পালা। একেকজন একেক ধরনের খাদ্যে ভেজাল নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছ, একেকটা উৎস থেকে তথ্য নিয়েছ। তাহলে সামগ্রিক চিত্রটা কি দাঁড়ালো তা বুঝতে ছোটো একটা পরিসংখ্যান করে ফেলতে পারো। এজন্য তোমাদের ক্লাসের সবার তথ্যগুলোকে একটি নির্দিষ্ট তথ্যসারণিতে লিখে ফেলতে হবে। তার আগে জেনে নাও মোট তথ্যদাতা কতজন।
  • নিচের তথ্য সারণি ব্যবহার করতে পারো, চাইলে খাতায় এরকম একটি ছক বানিয়েও করতে পারো।
  • এবার ৪/৫ জনের একটা দলে ভাগ হয়ে গিয়ে এই পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা করে নাও।

বাড়ির কাজ 

এবার তুমি যে খাবারটা খাও সেটা হয়তো সরাসরি তোমার কাছে আসে না। এর জন্য তোমাকে অনেকের উপর যেমন নির্ভর করতে হয় তেমনি অন্য কোনো জীবের উপরও নির্ভর করতে হয়। চলো এবার যে কোনো একটি খাবার নির্বাচন করে (তুমি যে খাবারের তথ্য সংগ্রহ করেছ), তার উৎস সন্ধান করা যাক: নিচের ডায়াগ্রামটি লক্ষ করো, এখানে মিষ্টি/রসগোল্লা তৈরিতে যা যা লাগে তা কোথা থেকে ও কীভাবে তোমার কাছে এসেছে তা দেখানো হয়েছে।

দ্বিতীয় সেশন

  • বিগত সেশনের কাজ ও বাড়ির কাজ থেকে একটা জিনিস কি লক্ষ করেছ? খাদ্যে ভেজালের একটা অন্যতম নিয়ামক হলো রাসায়নিক পদার্থ। তাহলে কি তুমি ভাবছ রসায়নের ব্যবহার আমাদের জীবনে নেতিবাচক? তা কিন্তু মোটেও নয়। বিজ্ঞানের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কিছু অসৎ মানুষ অপবিজ্ঞানকে আবিষ্কার করেছেন। আমাদের জীবনে রসায়নের ভূমিকা অসামান্য। চলো এই সেশনে সেই সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক।
  • অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে 'দৈনন্দিন জীবনে রসায়নের ব্যবহার' অধ্যায়টা বের করে গৃহস্থালির রসায়ন অংশটা ভালো করে পড়ে নাও। পড়া শেষে পাশের সহপাঠীর সঙ্গে শেয়ার করো। প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তা নাও।
  • খাওয়ার লবণ, বেকিং পাউডার, ভিনেগারের ব্যবহার তো তোমরা জানলে। খাদ্য সংরক্ষণে লবণ ও ভিনেগার ব্যবহারের একটা পরীক্ষণ করা যাক।
  • চারটি কাচের অথবা প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে তাতে ১ বা ২টি করে কাঁচামরিচ অথবা ছোটো কোনো সবজি/ফল রেখে ১ম বোতলে পানি, ২য় বোতলে লবণ মিশ্রিত পানি, ৩য় বোতলে ভিনেগার দিয়ে পূর্ণ করো। ৪র্থ বোতলটি খালি রেখে সংরক্ষণ করে রাখো কিছুদিনের জন্য।
  • তোমাদের কাজ হবে আগামী এক সপ্তাহ বোতলের ভেতরের সবজি বা ফল পর্যবেক্ষণ করা।
  • এছাড়াও আরও অনেক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। ফল অথবা সবজির টুকরা দীর্ঘ সময় চিনির সিরায় ডুবিয়ে পরে সিরা নিংড়িয়ে মোরব্বা তৈরি করা হয়। মোরব্বা তৈরি করার সময় ফলের জলীয় অংশ অনেকটা কমিয়ে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে প্রায় শুকনো অবস্থায় এনে সংরক্ষণ করা যায়। মোরব্বাতে ফল বা সবজির আকৃতি বজায় থাকে। আম, বেল, চালকুমড়া, আনারস, ইত্যাদি ফল ও সবজি থেকে মোরব্বা তৈরি করা হয়।
  • গৃহস্থালিতে আর কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ কী কাজে ব্যবহৃত হয় তার একটি তালিকা তৈরি করে ফেলো। অনুসন্ধানী পাঠের সাহায্য তো নেবেই, পাশের সহপাঠীর সঙ্গেও আলোচনা করে নিতে পারো।

গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের নাম

যে কাজে ব্যবহৃত হয়

  
  
  
  
  

তৃতীয় সেশন

  • গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত অন্যতম একটি রাসায়নিক পদার্থ হলো সাবান। তোমরা আমাদের ল্যাবরেটরি অভিজ্ঞতায় নিজেরা সাবান প্রস্তুত করেছ। চলো তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক সাবান কীভাবে ময়লা পরিষ্কার করে?
  • অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে সাবান ও ডিটারজেন্টের পরিষ্কার করার কৌশল অংশটুকু পড়ে জেনে নাও সাবান কীভাবে ময়লা দূর করে। এছাড়াও পরিষ্কারক সামগ্রী হিসেবে আর কী কী রাসায়নিক ব্যবহৃত হয় তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার রসায়ন অংশ পড়ে জেনে নাও।
  • তোমার নিজের পড়া শেষ হলে পাশের সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো। প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তা নাও।
  • সাবান ও ডিটারজেন্টের পরিষ্কার করার কৌশল অংশটুকু পড়ার আলোকে নিচের ছকটি পূরণ করো। এই অভিজ্ঞতায় ইতঃপূর্বে তোমরা যে দল গঠন করেছ, সেই একই দলে আলোচনা করে ছকটি পূরণ করো।

প্রশ্ন

শিক্ষার্থীদের উত্তর

সাবানের রাসায়নিক নাম কী? 
তোমাদের মতামত অনুসারে সাবানের দুটি অংশের নাম কী কী? 
সাবানের দুটি অংশের উপাদান ও বৈশিষ্ট্য কী কী?

1

2

কাপড় থেকে ময়লা দূর করার সময় সাবানের দুটি অংশ কীভাবে থাকে? চিত্র অঙ্কন করে দেখাও। 
সাবানের কোন অংশ কাপড় থেকে ময়লা দূর করতে অধিকতর ভূমিকা রাখে? কেন? 

চতুর্থ সেশন

  • গৃহস্থালি ছাড়াও কৃষি, শিল্প, বস্ত্র খাতসহ এমন কোনো ক্ষেত্র নাই যেখানে রসায়নের ব্যবহার হয় না। চলো জেনে নেওয়া যাক আর কোন কোন ক্ষেত্রে রসায়নের ব্যবহার কীভাবে হচ্ছে।
  • অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে রসায়ন, অংশটুকু ভালো করে পড়ে নাও। তোমার নিজের পড়া শেষ হলে পাশের সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো। প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তা নাও।
  • এবার একটা জিনিস খুব গভীরভাবে ভেবে দেখো তো, এই যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রসায়নের ব্যবহার করতে গিয়ে কি কোথাও কোথাও শিল্পবর্জ্য বের হচ্ছে না? ফলে কি পরিবেশ দূষণ হচ্ছে না?
  • তাহলে অনুসন্ধানী পাঠ থেকে 'শিল্পবর্জ্য ও পরিবেশ দূষণ' অংশটুকু পরে পাশের সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করে নাও কীভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এই বিষয়ে। প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তা নাও।
  • তুমি নিশ্চয়ই জেনেছ, মাইক্রো প্লাস্টিকের দূষণের ফলে আমাদের শরীরের ডিএনএ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দূষিত প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে আমাদের শরীরে কীভাবে মাইক্রো প্লাস্টিক আসতে পারে তুমি কি ভেবে লিখতে পারবে? চাইলে ছবি এঁকেও দেখাতে পারো নিচের খালি জায়গাতে।
  • খাদ্যে ভেজাল থেকে শুরু করে পরিবেশ দূষণ এইসব কিছু রোধে প্রয়োজন গণসচেতনতা। রসায়ন আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কিন্তু এর অপব্যবহার আমাদের জীবনে ঝুঁকি বয়ে আনছে। তোমরা নিজেরা সচেতন হয়ে যদি আশপাশের পাড়া-প্রতিবেশীদের সচেতন করো তাহলে সবচেয়ে বড়ো কাজ হবে।
  • তোমরা পরের সেশনে এই কাজটি করবে। তবে আজ এই সেশনে পরিকল্পনাটা করে নিতে পারো। ক্লাসের সবাই ৬-৮ জনের এক একটি দলে ভাগ হয়ে যাও।
  •  খাদ্যে ভেজাল নিয়ে তোমরা যে জরিপটি করেছ সেটা এখন খুব কাজে আসবে। জরিপের পরিসংখ্যানগুলো ব্যবহার করে তোমরা প্রতিবেদন লিখতে পারো, পোস্টার তৈরি করতে পারো, বিভিন্ন রকমের লেখচিত্র বা গ্রাফ তৈরি করতে পারো। কোন দল কী কাজ করবে তা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করে নাও।
  • কাজগুলো করতে কী কী উপকরণ লাগবে, কীভাবে উপস্থাপন অথবা প্রদর্শন হবে তাও ঠিক করে নাও।

পক্ষম সেশন

  • এবার কাজে নামার পালা। আগে থেকে তোমরা যেহেতু পরিকল্পনা করে রেখেছ, তাই আর সময় নষ্ট না করে কাজে হাত লাগাও। কাজটা সম্পূর্ণ তোমাদের নিজেদের হাতে করবে। প্রতিবেদন, পোস্টার, ব্যানার, কমিক্স ইত্যাদি যে কোনোভাবে তোমরা গণসচেতনতার কাজটি করতে পারো। সচেতনতার প্রসঙ্গে তোমাদের কাজে-
  1. খাদ্য কেনার সময় সচেতনতা
  2. খাদ্য সংরক্ষণের সময় সচেতনতা
  3. খাদ্য প্রস্তুতের সময় সচেতনতা
  4. খাদ্য খাওয়ার সময় সচেতনতা
  • এবং শিল্পবর্জ্য, পরিবেশ দূষণ, ও কীটনাশক প্রসঙ্গে-
  1. ইকো সিস্টেমে এসবের নেতিবাচক প্রভাব ও সমাধান
  • এসব বিষয়বস্তু যেন থাকে তা খেয়াল রেখো। চাইলে আরও কোনো পয়েন্ট তোমরা যোগ করতে পারো।
  • কাজ শেষে, সবাই মিলে আলোচনা করে নাও কীভাবে সব দলের কাজগুলো প্রদর্শিত হবে। চাইলে যেখানে গণসমাগম বেশি এমন কোথাও সাঁটিয়ে দিতে পারো।

 ফিরে দেখা

  • তোমার এলাকায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বা ভেজালের সম্ভাবনা বেশি এমন খাবার কোনটি? এসব খাবারে কী ধরণের দূষণ ঘটে?
  • ভেজাল খাবারের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে তোমার পরিবারে কী ধরণের সচেতনতা তৈরি করতে চাও?
  • নিরাপদ খাবারের জন্য সচেতনতা তৈরিতে তোমার কমিউনিটিতে তোমার কী করার আছে?
Content added By

Promotion

Promotion